করোনা
ভাইরাস শুধু মানবদেহই নয়,
ভয়ঙ্কর এ ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটেছে অর্থনীতিতেও।
করোনায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের নিয়ে
যতটা চিন্তিত তার চেয়ে কোনো অংশেই কম নয় অর্থনৈতিক ধসের শঙ্কা। বিশ্বজুড়ে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার নেতিবাচক প্রভাবে
বাংলাদেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, সামগ্রিক জীবনযাত্রা, জীবন-জীবিকা, দ্রব্যমূল্য, অতি সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সাথে
সাথে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের কর্মকান্ডসহ বাংলাদেশের সামগ্রিক অর্থনীতিকে বড়মাত্রায়
ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে।
যার প্রভাব শেষ পর্যন্ত বৈশ্বিক অর্থনীতির
প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব ফেলতে শুরু করেছে। কিন্তু করোনার কারণে ঠিক কতটা সংকটে পড়তে পারে
এদেশের বাণিজ্য?
মার্চের প্রথম সপ্তাহে জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা
আঙ্কটাড একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, চীন থেকে যদি সারাবিশ্বে কাঁচামাল
রফতানি ২ শতাংশও কমে যায়, তাহলে বিশ্ব অর্থনীতিতে ক্ষতি হবে
৫০ বিলিয়ন ডলার। আর বাংলাদেশে ক্ষতি হবে ১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। একই সাথে বাংলাদেশ
থেকে পণ্য রফতানি হয় এমন দেশগুলোতেও করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে থাকায় রফতানিতেও
এর নেতিবাচক প্রভাব পরেছে। প্রবাসীদের ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান এবং রেমিটেন্স ও রপ্তানির ওপরে বড়মাত্রায় ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরো হতে পারে। পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির ওপরেও করোনা আরো বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পরবে। পরিস্থিতি মোকাবিলার
দুর্বলতা এই ক্ষতির গভীরতা আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। এই অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের যে
লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা থেকে প্রায় এক লাখ কোটি টাকা কম আদায় হবে। এই ঝুঁকি মোকাবিলা
করে দেশের শিল্প-কারখানা টিকিয়ে রাখতে সরকার ইতোমধ্যে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার
প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনা ভাইরাসের কারণে
পৃথিবীর অনেক দেশেই তাদের জিডিপির ১০ শতাংশের বেশি আর্থিক ক্ষতি হবে। আমাদের যদি
তার অর্ধেকও হয়, তাহলেও ১ লাখ কোটি টাকা বেশি আর্থিক ক্ষতি
হবে। এর
মধ্যে তৈরি পোশাক এবং চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। করোনার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদী হলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত
হবে তৈরি পোশাক খাত। ইতোমধ্যে এ শিল্পের রপ্তানি অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করা শুরু
করেছেন অনেক ক্রেতারা।’ এছাড়াও ক্ষতিগ্রস্ত
হবে ওষুধ শিল্প,
পাট সুতা, ইলেক্ট্রনিক্স, সামুদ্রিক মাছ, প্রসাধনী ইত্যাদি। রাজস্ব আয়,
প্রবৃদ্ধি, খাদ্য নিরাপত্তা, নিত্যপণ্যের মূল্য বৃদ্ধি, আমদানি-রফতানি হ্রাস,
প্রবাসীদের আয় ও জনশক্তি রপ্তানীতে বড় ধরনের অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন অর্থনৈতিক
খাতে নেতিবাচক প্রভাব পরবে।
বাংলাদেশের শিল্প-কারখানার
কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্রপাতি, ভোগ্য নিত্যপণ্য, ফলমূল,
ইলেকট্রনিক্সসহ প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের বড় উৎস আমদানি পন্য। ইতিমধ্যে
মরণঘাতি এই ভাইরাস যে রুপ নিয়েছে তা বৈশ্বিক অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির ওপর খুব খারাপ
প্রভাব ফেলছে। বাংলাদেশে আমদানিকৃত সকল
কিছুর প্রায় ৯০ ভাগই আসে চীন থেকে। কিন্তু করোনার আঘাতে সব যেন লণ্ডভণ্ড হয়ে
যাচ্ছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য
উন্নয়ন ও ভ্রমণকেন্দ্রিক যোগাযোগের পরিসর অনেক বড়। চীন থেকে বছরে প্রায় এক হাজার
৪০০ কোটি ডলার পণ্য আমদানি করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ যে পরিমাণ পণ্য
আমদানি করে, এর ২৬ শতাংশেরও বেশি চীন থেকে। দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি
পোশাকশিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামালের জন্য প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৭০ থেকে
৭৫ শতাংশ নির্ভরশীলতা চীনের ওপর। এ ছাড়া শিল্প পরিচালনায় দক্ষ কর্মীর বড় জোগানদাতা
চীন।
করোনার প্রভাবে
রপ্তানি আয়ের সঙ্গে আমাদের অর্থনীতির অন্যতম অনুষঙ্গ রেমিট্যান্সসহ আরও বেশকিছু
খাত বড় ক্ষতির মুখে পড়বে। প্রবাসী আয়ে আমাদের প্রবৃদ্ধি ছিল ২১ দশমিক ৫ শতাংশ, যা খুবই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু এই সংকটে প্রবাসী আয়ও অনেক কমে
যাবে। পৃথিবীর অনেক দেশে আমাদের শ্রমিকেরা কাজ করছেন। সেসব দেশে বেতন কমে যাবে,
অনেকে চাকরি হারাবেন। ফলে এইসব শ্রমিকরা দেশে ফিরলে অর্থনীতি বড়
ধরনের চাপে পড়বে।
বাংলাদেশে
ঝুঁকি বাড়ছে। যতদিন এই পরিস্থতি থাকবে ও সামগ্রিকভাবে উৎপাদন বিনিয়োগ রপ্তানি এবং দেশের ভিতরে খাদ্যপণ্য উৎপাদন আমদানির ওপর একটা প্রভাব থাকবে। এখন যেমন আছে আগামীতেও থাকবে।’ বাংলাদেশ
একটি নিম্ন আয়ের দেশ দীর্ঘদিন ধরে লক ডাউনের ফলে দিন মজুর ও খেটে খাওয়া মানুষগুলো
এখন কর্মহীন ফলে তারা অর্থ ও খাদ্যের অভাবে ভূগছে। আমাদের দেশে দিন দিন করোনার
সংক্রামন বাড়েই চলছে । সোমবার (২০ এপ্রিল) পর্যন্ত আমাদের দেশে করোনা সনাক্তকারী
রোগীর সংখ্যা ২৯৪৮ জন। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে কিছু ব্যাবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট তৈরী
করে পণ্যের দাম বাড়িয়েছেন। দাম বেড়ে চলছে চাল, ডাল, তেল সহ কিছু নিত্য প্রয়োজনীয়
দ্রব্যের যার ফলে সব থেকে বেশি অসুবিধায় পরেছেন মধ্য ও নিম্নবিত্ত পরিবারগুলো।
Comments
Post a Comment