আসমানীদের কথা
আসমানীদের কথা
পল্লীকবি " জসীম উদ্দীনের" 'আসমানী’ কবিতা পড়ার পর আমি শুনেছিলাম আসমানী নামের একটি মেয়েকে দেখেই তিনি এ কবিতাটি লিখেছেন। আর সেই আসমানী বেগম মারা গিয়েছিলেন ২০১২ সালের ১৮ আগস্ট ।
আসমানীর মৃত্যুর পরও তিনি অমলিন। কবির সৃষ্টির মধ্য দিয়ে যিনি অমরতা লাভ করেছেন, বাস্তব জীবনে তাঁর অস্তিত্ব আমাদের আলোড়িত করেছে। তাঁকে কবিতার মধ্য দিয়ে কবি আমাদের আপনজন করে তুলেছেন। আসমানী আজ আমাদের মাঝে নেই। তবে তিনি বেঁচে থাকবেন আমাদের হৃদয়ে পল্লীকবির সাহিত্য কর্মে।
সেই আসমানী বেগমের বাড়ি ছিল ফরিদপুর সদর উপজেলার ঈশান গোপালপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে সেখানে যাওয়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি।
তবে বরিশাল লাঞ্চ ঘাটের কাছে (ছোট্ট একটা খাল পেড়িয়ে) অবস্থিত রসুলপুর বস্তিতে গিয়ে চোখের সামনে দেখেছি অনেক আসানীদের।
তাদের কালো চোখেও কৌতুক-হাসির কোনো চিহ্ন নেই; বরং সেখান থেকে রাশি রাশি অশ্রু গড়িয়ে পড়ে।
আমাদের দেশে এখনও অনেক আসমানী বেগম আছেন যারা ঠিকমতো পেটভরে খেতে পায় না। যাদের পরনের শত ছিন্ন তালি দেওয়া কাপড় তাদেরকে প্রতিনিয়ত উপহাস করে। আর তাদের বাঁশির মতো সুরেলা মিষ্টি গলার গানের আড়ালের কান্না আমাদের খুব কমই চোখে আসে।
তাদের বাড়ি পুরানো টিন দিয়ে ছাওয়া আর পাখির বাসার মতো হালকা। একটু খানি বৃষ্টি হলে তাদের ঘরে পানি পড়ে বিছানা পর্যন্ত জল উঠে যায় আর সামান্য বাতাস হলেউ ঘরখানি যেন ভেঙ্গে যায় যায় অবস্থা । সেখানেই আসমানিরা দুঃখ-কষ্টে সারা বছর কাটিয়ে দেয়। আসমানীরা পেটভরে খেতে পায় না, তাদের হাড় জিরজিরে শরীর সেই সাক্ষ্য আমাদের চোখে আসে না। তাদের বাড়ির চারপাশের পরিবেশও অস্বাস্থ্যকর। তাদের বাড়ির ধারে ছোট্ট ডোবায় ব্যাঙের ছানা, মশা, শেওলা-পানার মধ্যে কিলবিল করে, সেই মশা ম্যালেরিয়ার জীবাণু ছড়ায়। আবার সেই দূষিত পানি আসমানীরা গোসল ও প্রয়োজনীয় অনেক কাজে ব্যবহার করে। অনেক সময় তাদের অসুস্থতার জন্য তারা ভালো ডাক্তারও দেখাতে পারেন না।
একটি ছোট খাল অথছ তার দুইপাশের মানুষের জীবন কত বৈচিত্র্যময়।
একপাশে ব্যস্ত নগরীর কোলাহল, যান্ত্রিক শব্দ, ও বড় বড় অট্টালিকা এবং অন্য পাশে ক্ষুধার্ত পেট, ছেড়া কাপড়, ও নড়বরে আসমানীদের ঘর।
এক পাড়ের মানুষ চায় ক্ষুদা আর আসমানীরা খোঁজে খাদ্য।
Comments
Post a Comment